বিল্লাল হোসেন :
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার ছোট ধুশিয়া এলাকার ২০১১ সালে শালিসকারী নুরুল হক হত্যা মামলায় ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই সাথে দন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং অপর ২ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত।
২৬ ই জুন (বুধবার) দুপুরে কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালতের বিচারক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী এপিপি এডভোকেট মো. জাকির হোসেন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,সালিশ কারী নুরুল হক হত্যা মামলার রায় প্রদানের সময় আদালতের এজলাসে ১১ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন, অপর ৭ আসামি পলাতক রয়েছে। এছাড়াও আসামি মো. মনিরুল ইসলাম ও হিরণ মিয়ার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন এবং আসামি মো. ফুল মিয়া ও মো. সেলিম রায়ের পূর্বে মৃত্যুবরণ করায় তাদেরকে মামলার দায় হইতে অব্যাহতি প্রদান করেন বিজ্ঞ বিচারক। এ মামলায় মোট ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং যুক্তি-তর্ক শেষে এ দণ্ডাদেশ দেন। আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত উক্ত রায় বহাল রেখে দ্রুত কার্যকর করবেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ছোট ধুশিয়া গ্রামের মৃত আ. আজিজের ছেলে মো. মাছুম (৩৫), মৃত আ. লতিফের ছেলে তাজুল ইসলাম (৩২), আবদুল কাশেমের ছেলে মো. মোস্তফা (২৪), ডা. মনু মিয়ার ছেলে মো. কাইয়ুম (২৫), আবদুল ছাত্তারের ছেলে মো. কাইয়ুম (২৮), মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে মো. তবদুল হোসেন (৪০)।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ছোট ধুশিয়া গ্রামের মৃত ওয়াব আলীর ছেলে মো. নান্নু মিয়া (৪০), মৃত আলী মিয়ার ছেলে আ. মতিন মিয়া (৪০), মৃত আ. খালেক সাইদুল ইসলাম (২৪), সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে বাবুল মিয়া (২৫), মৃত আ. লতিফের ছেলে সফিকুল ইসলাম (৩৫), মৃত নায়েব আলীর ছেলে মো. মোসলেম মিয়া (৪৫), নান্নু মিয়ার ছেলে মো. সফিকুল ইসলাম (২৮), মৃত আ. বাতেনের ছেলে মো. হেলাল মিয়া (২৫), সরু মিয়ার ছেলে মো. আউয়াল মিয়া (৩০) ও মৃত আ. মতিন মিয়ার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৩০)।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিরোধ কেন্দ্র করে সালিশের রায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মামলার ০১ নং আসামি মো. মাসুমসহ অন্যান্য আসামিরা মিলে ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে নিহত নুরুল হককে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করে। এই ঘটনায় নিহত নুরুল হকের ছেলে মো. শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানায় ২২ জন (নাম উল্লেখসহ) আসামিসহ আরো অজ্ঞাতনামা আরও ১০/ ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ইকতার মিয়া ও এএসপি ইৎতুত মিস ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সততা পাওয়ায় আসামি মো. মাছুম মিয়াসহ ২০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক বিজ্ঞ আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি বিচারে আসিলে ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি সকল আসামিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠনক্রমে রাষ্ট্রপক্ষে ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক আজকে এই মামলার রায় প্রদান করেছেন।
মামলার বাদী মো. শরিফুল ইসলাম জানান, আমার বাবার হত্যা মামলায় আদালতের বিজ্ঞ বিচারকের রায়ে আমিসহ আমার পরিবারের সকলেই সন্তুষ্ট এবং ন্যায় বিচার পেয়েছি।
আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস।