নিজস্ব প্রতিবেদক :
পটিয়া কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশুনা করছে রিমা আক্তার বয়স ২০। ৪ বছরের প্রেমের সম্পর্ক একই এলাকার মোরশেদুর রহমান মিজানের সাথে। দুইজনের বাড়ির চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার হাইদগাও ৮ নাম্বার ওয়ার্ডে। ছেলে বর্তমানে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত মোগড়াপাড়া শাখায় ক্যাশ অফিসার হিসেবে কর্মরত।
পরিবার থেকে প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিয়ে ২ বছর আগে ইসলামিক রীতিনীতি অনুসারে তাদের কাবিন হয়। গতকাল ২৮ জুন তাদের বিয়ের দিন ধার্য হয়। বিয়ের আগে বরপক্ষ ২ লক্ষ টাকা ও ৫০০ বরযাত্রী খাওয়াতে হবে বলে রিমার পরিবারের নিকট দাবী করে। সে অনুযায়ী রিমার দিনমজুর বাবা-মা ২ লক্ষ টাকা জোগাড় করে পাঠিয়ে দেয় ও বরযাত্রীর খাওয়ানোর জন্য গরু ও অন্যান্য বাজারসদাই সম্পন্ন করে।
বিয়ের আগের দিন বরপক্ষ আর যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার দাবী করে। মেয়ের সাথে ছেলের এই বিষয় নিয়ে মনমালিন্য হয়। ফার্নিচার না দিলে ছেলে বিয়ের আসরে আসবে না বলে জানায়। মেয়ের বাড়ি থেকে এবার ফার্নিচার কেনার জন্য গিয়ে ফার্নিচার দরদাম করে আসে। রঙ করিয়ে বিয়ের পর পাঠানো হবে বলে জানায় মেয়ের পরিবার। ছেলের পরিবার থেকে বলা হয় তাহলে অন্য জায়গা থেকে কিনে দেন কিন্তু বিয়ের আগেই ফার্নিচার ছেলের বাড়ি পৌঁছাতে হবে।
মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ৪ বছরের। যে ভালোবেসে একসাথে জীবন মরণের স্বপ্ন দেখিয়েছে তার থেকে এমন আচরণ তার এমন চেহারা মেয়ে নিতে পারেনি। এদিকে তার গায়ে হলুদ আজকে। বাড়িতে বিয়ের সাজ। মেহমানরা সবাই এসে গেছে। গেইট বানানো হয়েছে। স্টেইজ বানানো হয়েছে। গায়ে হলুদের কেক চলে এসেছে। কেনা হয়েছে গরু ও অন্যান্য বাজারসদাই।
এদিকে নিজের ভালোবাসার মানুষ ও নিজের পরিবারের কাছে তার পছন্দের অবস্থান কোথায়? কাকে কিভাবে কষ্ট বুঝাবে? নিজেই তো ভালোবেসে পছন্দ করেছে। কোথায় আশ্রয় হবে তার এই বিধ্বস্ত মনটার? এমন সময়ে তার প্রিয় মানুষের থেকে এমন আচরণ একজন ২০ বছরের মেয়ে কিভাবে হ্যান্ডেল করবে আমার জানা নেই। এতো প্রেশার নিতে না পেরে রিমা একটি চিরকুট লিখেই ফ্যানের সাথে ঝুলে গিয়ে নিজেকে মুক্ত করলো এই যন্ত্রণা থেকে।
যৌতুকে বলি প্রতিদিন হাজারো নারী। কেউ সহ্য করছে নীরবে, কেউ বা মার খেয়ে কিংবা কেউ প্রতিবাদ করেও সহ্য করছে। আমরা কিছু জানি না কি হচ্ছে ৪ দেয়ালের মধ্যে। যখন কেউ রিমা আক্তারের মত দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরে প্রাণ দিয়ে দেয় তখনই সবাই যৌতুকের বিপক্ষে কথা বলে দুই দিন। ৩য় দিন থেকে আবার যেন সব ঠিকঠাক। কোথাও যেন কিছু হয়নি।
যৌতুকের বিপক্ষে সমাজের এই নীরব অবস্থানের পরিণতি চোখে আঙুল দিয়ে তুলে দেখিয়ে দিয়ে গেলো রিমা আক্তার। আপনি সামাজিক জীব হলে এই ঘটনা আপনার হৃদয়কে নাড়া দিবে। অন্যথা আপনি মানুষের মত বেঁচে থাকা আর জড়বস্তু।
এই ঘটনায় মেয়ে তার চিরকুটে লিখে দিয়ে গেছেঃ মোরশেদকে তোমরা ছাড়বে না। তার প্রাপ্য শাস্তি তোমরা তাকে দেবে।
আমি ছেলেটি ও তার পরিবারের উপযুক্ত দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
এমন একজন ছেলে দেশের স্বনামধন্য ব্যাংকে কাজ করছে জেনে আমি লজ্জিত। ব্যাংক কতৃপক্ষ এই ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে আমি আশা করি।
আপনার আশেপাশে যৌতুক দেয়া-নেয়া বা নারী নির্যাতনের মত ঘটনা পরিলক্ষিত হলেই কল করুন জাতীয় হেল্প লাইন ১০৯ নাম্বারে।
সচেতনতা তৈরি করুন। যৌতুক যারা দাবী করে ও যারা এটিকে উপহারের নামে নিতে আগ্রহী থাকে তাদের সরাসরি প্রতিহত করুন।
(সংগৃহীত)