গোমতী প্রতিদিন ডেক্স :
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় আধিপত্য বিস্তার’কে কেন্দ্র করে ইউপি মেম্বারের ছোট ভাইকে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামী আজিজুল হক ফারুককে আটক করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
নিহত ভিকটিম মুমিনুল হক পেশায় একজন কৃষিজীবি এবং গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ভাই আকবর হোসেন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানাধীন মুরাদপুর ইউনিয়নের ০৫নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেম্বার। তাদের এলাকায় কতিপয় ব্যক্তি মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম করত। নিহত ভিকটিমের ভাই ওয়ার্ড মেম্বার হওয়ায় ভিকটিম ও তার ভাই দুজনেই উক্ত অপকর্মকারী ব্যক্তিদের অসাধু কার্যকলাপে বিভিন্ন সময় বাধা প্রদান করত। এরুপ বাধা প্রদানের জন্যই উক্ত দুস্কৃতিকারীদের কাছে ভিকটিম মুমিনুল ও তার ভাই শত্রুতে পরিণত হয়। এই নিয়ে দুস্কৃতিকারীদের সাথে নিহত ভিকটিম মুমিনুল ও তার ভাইয়ের বিরোধ চলে আসছিল এবং কিছুদিন পূর্বে উক্ত দুস্কৃতিকারীদের বিভিন্ন অপকর্মের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে নিহত ভিকটিম মুমিনুল হকের সাথে বাকবিতন্ডা হয় ও তাকে বিভিন্ন রকম হুমকিও প্রদান করে।
গত ২৯ জুন ২০২২ খ্রিঃ তারিখ নিহত ভিকটিম মুমিনুল হক তার ছেলে ও ভাতিজাসহ গরু ক্রয়ের উদ্দেশ্যে মুরাদপুরস্থ ফকিহাট বাজারে যায়। সেখানে দরদাম মত গরু কিনতে না পারায় তারা ঐদিন বিকেলে একটি অটোরিক্সা যোগে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে তারা মুরাদপুরস্থ আমিন মোহম্মদ সী-রোডে নতুন গ্যাস অফিসের সামনে পৌছালে ০৪টি সিএনজি নিয়ে এসে দুস্কৃতিকারীরা পরিকল্পিতভাবে তাদের অটোরিক্সার গতিরোধ করে। তখন নিহত ভিকটিম মুমিনুল হক তার ছেলে ও ভাতিজাসহ সবাই তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে থাকে কেনো তাদের পথ আটকানো হয়েছে। সে সময় অন্য একটি সিএনজি থেকে নেমে জনৈক এক ব্যক্তি বলে অটোরিক্সার ভিতরে মুমিনুল বসা আছে তাকে মেরে ফেল। একথা বলার সাথে সাথে দুস্কৃতিকারীরা তাদের হাতে থাকা দেশী ধাড়ালো অস্ত্র ছুরি, রাম দা, খুর, চাকু ও ক্রিস দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মুমিনুল হকের শরীরে বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে। এসময় মুমিনুল হক গুরুতর আহত হয়ে রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়লে দুস্কৃতিকারীরা মুমিনুলের পরিহিত শার্টের পকেট ও লুঙ্গির ভিতরে থাকা নগদ ০১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা এবং একটি মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে মুমিনুল হককে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তার ছেলে, ভাতিজা মিলে আশেপাশের লোকজনের সহযোগীতায় তাকে প্রথমে সীতাকুন্ড সেবা ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসা জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। এ বিষয়ে নিহত ভিকটিম মুমিনুল হকের ছেলে আলী হোসেন সবুজ বাদী হয়ে গত ০১ জুলাই ২০২২ খ্রিঃ তারিখ চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানায় ০৮ জন নামীয় এবং ০৯/১০ জনকে অজ্ঞাতনামা করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে যার মামলা নং ০১/২৫৩ তারিখ ০১ জুলাই ২০২২ খ্রিঃ, ধারা-৩৪১/৩০২/৩৭৯/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
উল্লেখ্য যে, গত ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ উক্ত মামলার এজাহারনামীয় পলাতক ১নং ও মাস্টার মাইন্ড আসামী মোঃ সাহাব উদ্দিন(৩৪)’কে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম কর্তৃক আটক করতে সক্ষম হয় এবং বাকী পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করার লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে, উক্ত হত্যা কান্ডের অন্যতম পরিকল্পণাকারী ও এজাহারনামীয় ৩নং আসামী আজিজুল হক @ফারুক চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন বারবকুন্ড বাজার এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ১৫৪০ ঘটিকায় বর্ণিত এলাকায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে আসামী আজিজুল হক @ফারুক (২৩), পিতা-আব্দুল হক, সাং-হাতিলোটা, থানা-সীতাকুন্ড, জেলা-চট্টগ্রাম‘কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামী অকপটে স্বীকার যে, সে উপরে উল্লেখিত আকবর আলী মেম্বারের ছোট ভাই মুুমিনুল হককে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা মামলার অন্যতম পরিকল্পণাকারী ও এজাহারনামীয় ৩নং পলাতক আসামী।
উল্লেখ্য যে, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে ধৃত আসামী আজিজুল হক @ফারুক এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানায় হত্যা, অস্ত্র, ডাকাতি, মারামারি, নারী নির্যাতনসহ সর্বমোট ০৫টি মামলা পাওয়া যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামী সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply